• আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। (সুরা আল-বাক্বারাহ :২৭৫)
• আল্লাহ সুদকে নির্মূল করেন এবং দানকে বর্ধিত করে দেন। (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৬)
• হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়োনা। (সুরা আল ইমরান : ১৩০)
• (সুদ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও) যদি তোমরা তা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। (সুরা আল-বাক্বারাহ : ২৭৯)

রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

ইসলামী ব্যাংক বছরান্তে প্রকৃত মুনাফার হার (Actual Rate) নির্ধারন করে থাকে। কিন্তু যেসব স্থায়ী আমানতকারী MTDR/FDR বছর অতিক্রান্ত হবার পূর্বেই চুক্তি মোতাবেক মুনাফা নিয়ে চলে যায় তা কি সুদ নয়?



ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা নীতিমালায় আমানত সংগ্রহ করে তা ইসলামী পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে এবং লাভ-লোকসান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে আমানত হিসাব সমুহ পরিচালনা করে থাকে। ইসলামী ব্যাংকের আমানতের উপর মুনাফা প্রদানের পদ্ধতি হলো - যেহেতু ইসলামী ব্যাংক গ্রহণকৃত আমানতের টাকার মাধ্যমে ইসলামী পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করে। সেহেতু ব্যবসায় লাভ-লোকসানের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কারণ ব্যবসায় লাভ না হয়ে লোকসানও হতে পারে। যদি বছরের প্রথম ছয় মাসান্তে অধিক হারে মুনাফা প্রদান করা হয়, ব্যবসায় লোকসান হলে তা সমন্বয় করার জটিলতা এড়ানোর জন্য (Provision Rate) আনুমানিক হারে মুনাফা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বছরান্তে লাভ লোকসান হিসাবান্তে প্রকৃত মুনাফার হার (Actual Rate) নির্ধারণ করা হয়। আনুমানিক হারের সাথে প্রকৃত মুনাফার হার সমন্বয় করা হয়।

এমতাবস্থায়, প্রশ্ন হলো- ইসলামী ব্যাংক বছরান্তে প্রকৃত মুনাফার হার (Actual Rate) নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু যে সব স্থায়ী আমানতকারী (MTDR/FDR) বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বের চুক্তি মোতাবেক মুনাফা নিয়ে চলে যায় তা কি সুদ নয়?

এমটিডিআর / এফডিআর হিসাব খোলার শর্তানুযায়ী যদি কোন স্থায়ী আমানতকারী চুক্তি মোতাবেক বছর অতিক্রম হওয়ার পূর্ব্ই হিসাব বন্ধ করে চলে যায়, তাহলে আনুমানিক মুনাফার হারই আমানতকারীর জন্য প্রকৃত মুনাফার হার হিসাবে গণ্য হবে। অর্থা জাতীয় কোন আমানতকারী যদি বছর অতিক্রম হওয়ার পূর্বেই হিসাব বন্ধ করে চলে যায় এবং যদি আমানতকারীকে প্রদানকৃত মুনাফার হার প্রকৃত মুনাফার হারের চেয়ে বেশী হয় তাহলে ব্যাংক আমানতকারীর কাছে অতিরিক্ত প্রদানকৃত মুনাফা দাবী করবে না। আবার যদি আমানতকারীকে প্রদানকৃত মুনাফা প্রকৃত মুনাফার হারের চেয়ে কম হয় তাহলে আমানতকারীও ব্যাংকের নিকট অতিরিক্ত কোন মুনাফা দাবী করতে পারবে না। এটা পারস্পরিক সমঝোতা চুক্তির বিষয়। আর এমন চুক্তি হতেই পারে। তাই উহা সুদ নয়।

শনিবার, ৪ মে, ২০১৩

ইসলামী ব্যাংক সুদ খায় না মুনাফা খায়; আসলে ঘুরে ফিরে কি একই কথা নয়?



সুদী ব্যাংকগুলো সুদ খায়, আর ইসলামী ব্যাংকগুলো খায় লভ্যাংশ। আসলে ঘুরে ফিরে একই কথা - এ ধরনের মন্তব্য যারা করে থাকেন বা যাদের মনে এমন প্রশ্ন উদয় হয়, তাঁদেরকে একটি উদাহরণের মাধ্যমে এর উত্তর দেয়া যেতে পারে। যেমন - গরু, ছাগল, হাঁস, মুগরী ইত্যাদি প্রাণীগুলো মুসলমানদের জন্য তখনই খাবারযোগ্য এবং বৈধ হবে যখন আল্লাহর নামে উহা জবাই করা হবে। নাম ব্যাতীত জবাই করা হলে বৈধ হবে না।

আবার বিধর্মীদের বেলায় পশু জবাইয়ের প্রশ্নই ওঠে না। কেবল পশুকে যে কোন ভাবে হত্যা করলেই চলে। বাহ্যত এ দু'ক্ষেত্রে পশু হত্যার বিষয়টি এক রকম মনে হলেও আসলে এক রকম নয়। মুসলমানগণ যদি আল্লাহর নামে জবাই করে তখনই জবাইকৃত প্রাণী বৈধ হয়। তাই এ ক্ষেত্রে বলা যায় একটু ঘুরিয়ে নেয়া হলেই ইসলামসম্মত হয়। অন্যথায়, ধর্মের আঙ্গীকে কোন কর্মকে মূল্যায়নের গুরুত্বও থাকত না।

তদরুপ, আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম করেছেন, ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করাকে বৈধ ঘোষণা করেছেন। আর মুনাফা অর্জনের জন্যে ক্রয়-বিক্রয়ের কতগুলো ইসলামী পদ্ধতিও দেয়া হয়েছে। কেউ যদি ইসলামী পদ্ধতি অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা বাণিজ্য না করে নিজের মনগড়াভাবে অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তাহলে সেটা হবে অবৈধ বা সুদী লেনদেন। সুদ ও মুনাফার মধ্যে রয়েছে পদ্ধতিগত পার্থক্য। ইসলামী ব্যাংক আর সুদী ব্যাংকগুলোতে মুনাফা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিগুলো সম্পুর্ণ ভাবে উপেক্ষিত। বরং তাদের টিকে থাকার মূল ভিত্তিই হচ্ছে সুদ। সুতরাং, মুনাফা এবং সুদকে এক করে দেখার কোন অবকাশ নেই।

সুদ এবং মুনাফা/ব্যবসার ব্যাপারে বর্তমানে যেরুপ ভূল ধারণা রয়েছে আইয়্যামে জাহেলিয়্যার যুগেও আরবের কাফির, মুশরিক এবং ইহুদীদের মাঝে তা ছিল। তারা খোদায়ী এ বিধানকে মেনে নিতে রাজি হলো না। বরং পাল্টা উত্তর দিয়েছিল যে, "ইন্নামাল বাইয়ু মিছলুর রিবা'' অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা/মুনাফা) তো সুদের অনুরুপ। সুদের মাধ্যমে যেমন মুনাফা অর্জিত হয় তেমনি ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমেও মুনাফা অর্জিত হয়ে থাকে। সুতরাং সুদ হারাম হলে ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসার মুনাফাও হারাম হওয়া উচিত ছিল।

তাই আমরা যারা মুসলমান কখনো এ কথা বলব না যে, সুদ এবং মুনাফা ঘুরে ফিরে একই কথা। এ কথা নিশ্চয়ই কুরআন এবং হাদীসের পরিপন্থী।